ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ভারতে পালিয়ে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। এই সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। জানিয়েছেন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সংস্কার উদ্যোগের কথা।
ভাষণের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদ এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদকে সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
একই সঙ্গে স্মরণ করেন ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা আহত হয়েছেন, যারা ৯ দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং যারা দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তাদের।
ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি। আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।
বিজ্ঞাপন
গত ১৫ বছরে গুমের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়াতে পারে
ড. ইউনুস বলেন, কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন
গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারকে নিরাপত্তা ও বিচারের বিষয়ে আশ্বস্ত করে ড. ইউনূস বলেন, অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তারা আবার আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারো সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কোনো সদস্য কিংবা অন্য কেউ যাতে হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্য আমরা গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সাক্ষর করেছি। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা আমাদেরকে তাদের রিপোর্ট হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জুলাই গণহত্যা ও গুম-খুনের বিচার হবে আন্তর্জাতিক আদালতেও
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত প্রতিটি হত্যার বিচার করা হবে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত কাজ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিচারের আওতায় পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে।
তিনি বলেন, দেশে বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত প্রত্যেকটি গুম, খুন ও সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌশলী করিম খানের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে ভুক্তভোগীদের যে বিবরণ আমরা পেয়েছি তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর ছাত্র-ছাত্রীরা শহর বন্দরের দেয়ালে-দেয়ালে তাদের মনের কথা লিখেছে। তাদের আগে যারা গুমের শিকার হয়েছেন, প্রতিটি গোপন আস্তানার দেয়ালে-দেয়ালে তারা লিখে রেখেছেন তাদের কষ্টের মর্মস্পর্শী বিবরণ। তাদের এসব কষ্টের কথা শুনে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠেছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবই। অভিযুক্ত যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীরই হোক তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সূত্রঃঢাকা পোষ্ট